প্রকাশিত : ২০১৮-১০-১৮ ১৯:২২:২০
রিপোর্ট : সম্পাদকীয়
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে ৪৭ বছর আগে। সুদীর্ঘকাল পরও এ দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট। বস্তুত দেশে প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হলেও শ্রেণি বৈষম্যের চিত্রটি চরম হতাশাজনক। অথচ স্বাধীনতার পরপরই প্রণীত দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির একটি হিসেবে সমাজতন্ত্রকে ধরা হয়েছিল। সংবিধানে সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা থাকলেও দেশে এমন এক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিদ্যমান যেখানে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য না কমে বরং তা বেড়েই চলেছে। শ্রমিক শ্রেণি তার ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না, ধনিক শ্রেণি শ্রমিকের শ্রম শোষণ করে ফুলে-ফেঁপে উঠছে।
দেশের সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে বিশেষ শ্রেণির কাছে। বিরাজমান বৈষম্য কমাতে হলে সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, শ্রমিক শ্রেণিকে তার ন্যায্য মজুরি বুঝিয়ে দেয়া। এটা সত্য, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্র কিছু ব্যয় করছে। কিন্তু এর পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। শ্রমিক শ্রেণি, বিশেষত গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন হলেও কাঙ্ক্ষিত মজুরি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে, দেশে শ্রেণি-বৈষম্য কমাতে হলে অর্থনীতিতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন এবং এই সংস্কার হতে হবে সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখেই।
বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ক্রমশ বাড়ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার টানা কয়েক বছর ধরেই ৭ শতাংশের ওপরে। হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। গড় আয়ু ৭২ বছর ছাড়িয়েছে। কিন্তু এমন মসৃণ পথেও যেন কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে ধনী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের সাম্প্রতিক সিআরআই সূচকে বলা হয়েছে, ১৫৭টি দেশের মধ্যে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৮তম। ১৯৭১ সালে আমাদের যে গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিল ৩০ লাখ নারী-পুরুষ-শিশু, তখন জাতীয় নেতৃত্বের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল বৈষম্যহীন সমাজ গঠন।
১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানেও তা পুনর্ব্যক্ত হয়। আমরা বিপরীত পথে হাঁটছি- বৈষম্য কমছে না, বরং অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে তা আরও প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ আয়-ব্যয় জরিপ থেকেও বৈষম্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তাহলে কি আমরা এ তত্ত্বের কাছেই হার মানব যে, যত প্রবৃদ্ধি ঘটবে এবং প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, সমাজে বৈষম্য ততই বাড়বে? বৈষম্যহীন প্রবৃদ্ধি না হোক, অন্তত তা ক্রমে কমিয়ে ফেলার লক্ষ্য কি অধরাই থেকে যাবে? এটা ঠিক যে, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বেশ কিছু কর্মসূচি বাংলাদেশে চালু রয়েছে এবং এ খাতে বছর বছর বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু এটাও তো মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। কৃষি-শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে উদ্যোক্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু যে বিপুল জনগোষ্ঠীর মেধা-শ্রমে-ঘামে উন্নয়নের চাকা ঘুরছে, তাদের প্রতি অবিচার কেন? মজুরির হার ও কর্ম প্রতিষ্ঠানে শ্রমজীবীদের অধিকারই-বা কেন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হবে?
মানুষে মানুষে পার্থক্য বা ভিন্নতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। সমাজ, জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ, শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, স্বাস্থ্য এসবের নিরিখে পার্থক্য বা ভিন্নতা নির্দেশিত হয়। কিন্তু মানুষের জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো এবং জীবন মানের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবস্থাগুলো বিধানের ক্ষেত্রে যখন কোন সমাজে, জাতিতে, দেশে বা বিশ্ব-ব্যবস্থায় ভিন্নতা বা পার্থক্য প্রকট হয় তখন তাকে বলা যায় মানবতার সংকট। ধনীক শ্রেণির ক্ষমতার অপব্যবহার ও শোষণই এ সংকটের কারণ। যা বিশ্বে জন্ম দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির। মানবতাবিরোধী এইসব শ্রেণি শত্রুদের চিহ্নিত ও বয়কট করে তাদের রুখে দাঁড়ানোই আজ প্রতিটি শ্রেণি সচেতন মানুষের মহান কর্তব্য।
Copyright © 2013 - 2019, দিবালোক
উপদেষ্টা সম্পাদক : এনায়েত সরোয়ার, প্রধান সম্পাদক : ফারুক যোশী, প্রবাস বিষয়ক সম্পাদক : আনোয়ারুল ইসলাম অভি, পরিচালনা পর্ষদ : আবুল কালাম আযাদ, সরওয়ার আহমদ, এনাম উদ্দিন, গোলাম আকবর মুক্তা, এমরান আহমদ
সম্পাদক : হাসান শাহরিয়ার, প্রকাশক আবু হাসনাত কর্তৃক আল জালাল অফসেট প্রিন্টার্স থেকে মুদ্রিত, প্রমথ বিপণী (১ম তলা) স্কুল মার্কেট থেকে প্রকাশিত। সম্পাদকীয় ও বার্তা : ০১৮১৯ ৮২৭২৯১
আপনার সংবাদ, ছবি ও ভিডিও পাঠান এই ঠিকানায় : dibaloksylhet@gmail.com, ফেসবুকে দেখুন
www.facebook.com/dibaloksylhet
Email : dibaloksylhet@gmail.com, Web: www.dibalok.com
Developed By - IT Lab Solutions Ltd. Helpline - +88 018 4248 5222